
নড়িয়া প্রতিনিধিঃ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলাধীন ঘড়িসার ইউনিয়নে বেহুলা বেগম নামে এক বিধবাকে মারধর ও শ্লীলতাহানী করা হয়েছে। এর অাগে জোরপূর্বক জমি দখল করে ঘর উঠিয়ে দখল নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ঘরিসার ইউনিয়নের ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার সাহনাজ ও তার স্বামী পনু সিকদার ওরফে রিপন সিকদারের পরিকল্পিত শড়যন্ত্র বলে দাবী করেছেন হামলার শিকার বিধবা বৃদ্ধা বেহুলার স্বজনরা।
বেহুলা বেগম ঘড়িসার ইউনিয়নের সিংহলমুড়ি গ্রামের মরহুম রকমত অালী দপ্তরীর স্ত্রী, তিনি অাহত অবস্থায় নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগ হতে জানতে পারি, গত ২৫মে বেলা এগারোটার সময় বেহুলা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তার হাত ও মাথায় অাঘাতের চিহ্ন রয়েছে, কোমরেও গুরুতর অাঘাত রয়েছে।
২৬মে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেহুলা বেগমকে দেখা যায়, মারধরের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অামার জমি দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে দখল করার পায়তারা করে অাসছে একই গ্রামের মজিদ সিকদার,অামির হোসেন মাঝি, পনু সিকদার ওরফে রিপন সিকদার, সাহজাহান সিকদার, শাহীন সিকদার, লিটন সিকদার ও হেলাল চৌকিদার সহ অারো কয়েকজ জন। উপরোক্ত সকলে এক হয়ে অামার জমিতে গত ০১মাস অাগে অামির মাঝিকে নিয়ে এসে জোর করে একটা ঘর তোলে, ঐ জমি দখলের বিষয়ে কোর্টে মামলাও চলছে। জমির গাছ কেটে নেয়, গাছের ফল নিয়ে যায়, অামারে গালিগালাজ করে, গত ২৫মে সকালে অত্যাচারের অতিষ্ট হয়ে প্রতিবাদ করলে স্থানীয় ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার সাহানাজ ও তার স্বামী পনু সিকদার ওরফে রিপন সিকদার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং তাদের উস্কানীতে এবং উপস্থিতিতেই অামাকে মারধর করে।
‘বৃদ্ধ মানুষ প্রতিবাদ করার মতো শক্তি অামার নাই, একটা মাত্র ছেলে তাও ঢাকা থাকে। কেঁদে ফেলেন বিধবা বেহুলা, তিনি চাপা কান্না নিয়ে বলেন”অামি ওগো জিঙ্গুলের বাড়ি অার মাইর খাইয়া মাটিত্তন উঠতে পারি নাই বাবা, এই দেখেন (মাথা অার হাত দেখিয়ে)কি করছে, এই বয়সে সবার সামনে মানসম্মান নষ্ট করলো অামার, কোমরটা মনে হয় ভাইঙ্গা গেছে, অামি হাটতে পারি না বাবা। অামি বিচার চাই সবার কাছে।
বেহুলা’র একমাত্র ছেলে মোঃ চাঁন মিয়া দপ্তরী এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়রা বলেন, পনু সিকদার বেশ প্রভাব বিস্তার করেন এলাকায়, তাদের একটা গ্রুপই রয়েছে যারা এখানকার মানুষদের বিভিন্ন ঝামেলায় ফেলে অাবার টাকাপয়সা নিয়ে সমাধানের ব্যবস্থা করেন তারা। কেউ ভয়ে কথা বলে না, পনু সিকদারের স্ত্রী একজন ইউপি মেম্বার, তার সামনে বৃদ্ধা বেহুলাকে মারধর করা বেমানান। বর্তমানে বেহুলা বেগমের জমি যিনি দখল করেছেন অনেক বছর কোন সম্পদ না থাকার কারনে তার দাদীকে এই যায়গায় রায়তী হিসেবে থাকতে দেয়া হয়েছিলো, তিনি মারা গেছেন, তার কোন জমিজমা না থাকায় এখানেই তাকে মাটি দেওয়া হয়, সেই দাদির সূত্রধরেই এতোবছর পরে পনু সিকদারদের সহযোগিতায় জায়গাটি জোরজবরদস্তি দখল করেছে অামির মাঝি।
অাহত বেহুলার একমাত্র ছেলে চাঁনমিয়া দপ্তরী বলেন, অামার কাছে অার অামার মার কাছে এই এলাকার মহিলা মেম্বার(৪,৫,৬নং সংরক্ষিত ইউপি সদস্য) সাহানাজে স্বামী পনু সিকদার ২লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়েছিলো ঝামেলা মিট করবে বলে, অামি না দেওয়ায় প্রথমে বাড়ি দখল করলো এখন অামার মারে মারলো, অামরা নিরুপায় হইয়া নড়িয়া থানায় মজিদ সিকদার,অামির হোসেন মাঝি, পনু সিকদার ওরফে রিপন সিকদার, সাহজাহান সিকদার, শাহীন সিকদার, লিটন সিকদার ও হেলাল চৌকিদারদের নামে একটা অভিযোগ করছি,অামরা এর বিচার চাই।
প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিসের দৃষ্টিপাতও কামনা করেছেন চাঁনমিয়া।
অামির মাঝির দখলকৃত জমিতে একটি দোচালা নতুন টিনের ঘর তোলা, সেখানে গিয়ে অামির মাঝি কে পাওয়া যায়নি। অামির মাঝির শ্বাশুরী নূরজাহান জমিটি দখলের পর থেকে এখানেই থাকেন। অামির স্ত্রী সন্তানসহ ঢাকায় থাকেন, তাই দখলদারিত্ব প্রকাশ করতে গত ০১ মাস ধরে শ্বাশুরী কে রাখেন এই বাড়িতে। অামির মাঝির শ্বাশুরী নূরজাহান সংবাদকর্মীর মুঠোফোনের নাম্বার চেয়ে রাখেন, অামির মাঝি অাসলে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে চাইতেও পারেন তাই।
একই দিন গত ২৭মে বিকেলে ঘড়িসার ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাহনাজের স্বামী পনু সিকদার পরিচয় দিয়ে বলেন, কি ব্যাপার ভাই, সিংহলমুড়ি এসেছিলেন? যে বিষয়ে এসেছেন তার বিষয়ে কোর্টে মামলা চলতাছে, অামরা স্থানীয় মুরুব্বীরাও দেখতাছি, সাংবাদিকদের কি? এই বিষয় অাপনারা কেনো অাইছেন? মুঠফোনে বেহুলা বেগমের মারধরের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পনু সিকদার অকপটে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অাপনারা যা মন চায় লেখতে থাকেন, এলাকার বিষয় অামরা নিজেরাই দেখমু।
বেহুলা চায় তার সম্পত্তি হতে দখলদারদের উচ্ছেদ, স্থানীয় অনেকেই মজিদ সিকদার, পনু সিকদার ওরফে রিপন সিকদার, সাহজাহান সিকদার, শাহীন সিকদার ও লিটন সিকদারদের নানা ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, ভয়ে এদের বিরুদ্ধে বলতে চায় না কেউ, অাবার কেউ চিন্তা করে এতো প্যাচাপেচি না করে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে সমধান করে ফেলি