শরীয়তপুর জার্নাল ডেস্ক
বাংলাদেশ ৫২ বছর হলো, পাকবাহিনীর সাথে ৯ মাস যুদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে বিজয় অর্জন করেছে। ৫২ বছরের বিজয় উদযাপন করতে, দেশের সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মরিচ বাতির
ঝলকানিতে সেজেছে বর্ণিল, সাজে। আর এই দিকে ব্যাতিক্রম সাজে সেজেছিল শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। বিজয় দিবস উপলক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি বিভাগ সাজিয়েছিল জন্মদিনের বেলুন এবং সরকারি জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ (কনডম ফুলিয়ে ) দিয়ে। গত ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে, এসব বেলুন দিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সাজানো হয়। এই ঘটনায় সিনিয়র স্টাফ নার্স রেজাউল করিমকে জরুরি বিভাগেত দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আর এই ঘটনায় শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় সিনিয়র স্টাফ নার্স রেজাউল করিমকে জরুরি বিভাগের দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এবং এমন ঘটনা কিভাবে ঘটল সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জুনিয়র কন্সালটেন্ড (আর্থো) ডাঃ মোঃ মফিজুল ইসলামকে প্রধান করে শনিবার ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এই বিষয়ে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবদুস সোবহান এর তার কাছে জানতে চাওয়া হয় বিজয় দিবসের সাজসজ্জা সঠিকভাবে হয়েছে কিনা সেগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদারকি করেছিল কিনা ? এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সাজসজ্জার বিষয়টি তদারকি করেছি। তখন কনডম দিয়ে ফুলানো বেলুন দেখতে পাইনি। মূলত এ ঘটনাটি ঘটেছে এর পরে। পরেরদিন শুক্রবার (১৬ ই ডিসেম্বর) সকালের দিকে ফেইসবুকে দেখতে পাই এই ঘটনা। দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
কনডম দিয়ে জরুরী বিভাগ কেনো সাজিয়েছেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে, সিনিয়র স্টাফ নার্স রেজাউল করিম দ্যা ডেইলি স্টারকে বলেন, জরুরি বিভাগ সাজানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বেলুন আমাদের কাছে ছিল না। তাই জরুরি বিভাগে বসেই আমাদের হাসপাতালের ৫/৬ জনের সাথে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করি। পরে সবার সিদ্ধান্তনুযায়ী সামান্য কিছু কনডমের বেলুন ব্যাবহার করি। এখন মনে হচ্ছে আমাদের এটি করা উচিত হয়নি।
এই দিকে কনডম দিয়ে বেলুন ফুলিয়ে জরুরি বিভাগ সাজানোর বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতেই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তুমুল সমালোচনার মূখে পড়ে। ঘটনার দিন থেকে আজ রবিবার পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে।
শরীয়তপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ হোসেন মুন্সীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। কনডমের বেলুন দিয়ে বিজয় দিবসের সাজসজ্জার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?? তখন তিনি বলেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে বিজয় দিবসের সাজসজ্জায় কনডমের-ব্যবহার যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমি মনে করি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়েছে। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আব্দুস সোবাহান ইচ্ছাকৃতভাবে মুক্তিযুদ্ধকে হেয় প্রতিপন্ন
ও অবমাননা করার জন্য এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। কারণ সবাই জানে তিনি জামাত পন্থী লোক। তিনি সহ তার পরিবারের সবাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী করেন।
তিনি আরো বলেন, জামাত স্বপক্ষের লোক হওয়ায় তার ভিতরে, দেশাত্মবোধ নেই, এমনকি বিন্দুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই। তিনি কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না। শুনেছি এর জন্য হাসপাতালের একজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাকে যদি অব্যহতি দেয়া হয়ে থাকে তাহলে আমরা মনে করি, দ্বায়িত্বে অবহেলা এবং ইচ্ছাকৃত এই ঘটনা ঘটানোর জন্য সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কেও তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হোক। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই বলেই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনা ঘটিয়েছেন।