নিজস্ব প্রতিবেদক : শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর, চরভাগা, উত্তর তারবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া এবং চরসেনসাস ইউনিয়নের প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ নদী ও খাল দখল করে একদিকে যখন বাঁধ এবং স্থাপনা নির্মাণ করছে, সেখানে দখল হওয়া খাল গুলোকে পূণরুদ্ধার না করে ভ্যাকুর মাধ্যমে খাল খননের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর এসব খাল খননের কাজে দায়িত্বরত ঠিকাদারগণ সরকারী নিয়ম নীতি না মেনেই খাল খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীদের অভিযোগ, কোন ধরণের নোটিশ বা উচ্ছেদ অভিযান ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খননের কাজ করছেন। খাল খনন কাজে ব্যবহৃত ভ্যাকুর মাধ্যমে স্থানীয়দের বসতঘর, টিউবওয়েল, টয়লেট ও গাছের বাগান জোরপূর্বক ভেঙ্গে দিচ্ছেন। আর খাল থেকে উঠানো মাটি লোকজনের বসতঘর ও আবাদি জমিতে স্তুপ করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। এদিকে গত ১৩মার্চ জেলার বিভিন্ন দপ্তর প্রধান, জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবন্দ, শিক্ষাবিদ, ইমাম, পুরোহিত, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক এবং সকল শ্রেণীর পেশার মানুষের সাথে নবাগত জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের মতবিনিময় সভা করেছে। সেখানে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামকে খাল খননের ব্যাপারে জনগন যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই মতবিনিময় সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম কথা দিয়ে ছিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে উক্ত সমস্যার সমাধান দিবেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অমান্য করে তাদের ইচ্ছে মতো খাল খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে মোট ৫৯টি খাল খননের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খাল গুলোর খনন কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। এ মুহুর্তে ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালী ইউনিয়নের চর পাইয়াতলীতে ১টি, সখিপুর ইউনিয়নের মাধু সরকার কান্দিতে ১টি, দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নের আফা মোল্যার বাজারে পাশে ১টি, উত্তর তারাবুনিয়ার নুরু মাঝির বাজারে ১টিসহ মোট ১১টি খাল খননের কাজ চলছে। কিন্তু ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের আনন্দ বাজারে পদ্মার শাখা নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ, চরভাগা ইউনিয়নের ঢালী কান্দি ও আজগর হাওলাদার কান্দিতে খাল ভরাট করে রাস্তা ও ঘরবাড়ি নির্মাণ, উত্তর তারাবুনিয়ার স্টেশন বাজারে খাল ভরাট করে বাজার স্থাপন এবং চরসেনসাস ইউনিয়নের ফেরী ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় খাল ভরাট করে স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও সেগুলো উদ্ধার না করে জনগনের ক্ষতি হচ্ছে এমন খাল খনন করায় স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৯৯ ভাগ রাস্তাঘাট যেখানে চলাচলের অনুপোযোগী সেখানে খাল খননের ব্যাপক তৎপরতা দেখে জনগনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খাল খনন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের কোন কথায় কর্ণপাত না করে তাদের ইচ্ছে মত খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা খাল থেকে মাটি উত্তোলন করে স্থানীয় লোকজনের ঘরবাড়ি ও উঠানে স্তুপ করে রাখছে। ভ্যাকুর আঘাতে কারো ঘরের চাল ও কারো দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে। কারো নলকূপ, টয়লেট ও পাকের ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে। ফসলি জমিতে আবাদ করা ফসলের উপর মাটি রেখে দিচ্ছে। তাছাড়া রাস্তার পাশে খাল খননের কারণে বর্ষাকালে রাস্তা ধসে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এক কথায়, সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে এসব এলাকার জনগন।
ডিএমখালী ইউনিয়নের চরপাইয়াতলী এলাকায় সখিপুর-টু প্রকল্পে প্রায় দেড় কিলো মিটার দৈর্ঘের একটি খাল খননেরর কাজ করছে ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদার।
ভেদরগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননে অনিয়মের আভিযোগ।
March 28, 2018 , 2:42 am