‘একজন সাংবাদিকের হটাৎ চলে যাওয়া। ‘১৩ নভেম্বর ছিল সেজুতির জন্মদিন। বাবা কেক নিয়ে বাড়ি ফিরবে। মোমের আলোতে কন্যাকে নিয়ে কেক কাটবে। সে আনন্দে সেজেগুজে সেজুতি অপেক্ষা করছিল। বারবার পথের পানে উকি-ঝুকি দিচ্ছিল, এই বুঝি কেকের প্যাকেট হাতে বাবা ফিরল। না বাবাতো কেকের প্যাকেট হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেনি।
খাটিয়ায় শুয়ে সহকর্মী-স্বজনের কাঁধে চরে ফিরেছে। সেজুতি অভিমান করেছে,বাবা কথা রাখেনি। ফিরে এসে জরিয়ে ধরে বলেনি মা আমি তোমাকে ভালবাসি।
কি জবাব দেব সেজুতিকে। আমরা কি বলতে পারব আর কখনও কেক নিয়ে বাড়ি ফিরবেনা। বলবেনা শুভজন্মদিন মা। আমি তোমাকে ভালবাসি। সারাটা জীবনই বাবার ফেরার পথেরপানে চেয়ে থাকতে হবে। কিন্তু বাবা আর ফিরবে না।
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় একটি সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব করেন ৭১ টিভির শরীয়তপুর প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন পলাশ। দায়িত্বের প্রতি বেশি মনোযোগি হওয়ায় অসুস্থতাকে গুরত্ব না দিয়েই কাজ করে যাচ্ছিলেন। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সাংবাদিক রোকনুজ্জামান পারভেজ তাকে ফোন করে নড়িয়ার খবর নিতে চেষ্টা করে। পারভেজকে ফোনে জানায় তার বুবে ব্যাথার কথা। কথা বলতে পারছিলেননা, তার পরও তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। কথা বলতে বলতে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পারভেজ বুঝতে পারে কোন বিপদ হয়েছে। সাথে সাথে পারভেজ সাংবাদিকদের সুহৃদ নড়িয়ার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ভুট্টু ভাইকে ফোন করে আনোয়ারের অসুস্থতার কথা জানান। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার অনুরোধ জানায়। ভুট্টু ভাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, ততক্ষনে সব শেষ। পারভেজের সাথেই শেষ কথা হয় আনোয়ারের। মৃত্যুর অন্তিম সময়েও, মৃত্যু যন্ত্রনার মধ্যেও সহকর্মিকে তথ্য দিতে ব্যস্ত ছিলেন। আনোয়ার আমাদের বুঝিয়ে দিলেন মরনেও সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহ করতে হয়। হায়রে সাংবাদিকের জীবন।
আনোয়ার হোসেন পলাশ বলে যান, কি রেখে গেলেন সেজুতির জন্য? সেজুতি কি নিয়ে বেঁচে থাকবে? ওর পড়া লেখার দ্বায়িত্ব কে নেবে? কে ওর ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে? বিপদে কে ওকে আকরে ধরবে?
হায়রে সাংবাদিকের জীবন!!!!!!!!!!!
———লেখাটি, সাংবাদিক সত্যজিৎ ঘোষ, প্রথমঅালো, শরীয়তপুর।