
বাংলাদেশের মানচিত্র ভালভাবে নজর দিয়ে দেখলে দেখা যায় যে, দেশের দক্ষিণাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল এবং পূবাঞ্চলের মধ্যবতী জেলা শরীয়তপুর এবং এ জেলার চারপাশে চারটি নদী দ্বারা বেষ্টিত। যার উত্তরে প্রমত্তা পদ্মা, দক্ষিণে কীর্তনখোলা, পূর্বে মেঘনা ও পশ্চিমে আঁড়িয়াল খা। যেহেতু পূর্বে এদেশে নৌ পথেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় শরীয়তপুর ছিল ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলা। শরীয়তপুর জেলায় যেকটি বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সবকটিই নদী পথেই । সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির আশীবাদে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেছে, অসংখ্য সড়ক অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। সে সাথে এগিয়ে যাচ্ছে শরীয়তপুর জেলার যোগাযোগের ভাগ্যের চাঁকা। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় টার্রিং পয়েন্ট হতে যাচ্ছে শরীয়তপুর জেলা। তৎকালীন পূর্ব মাদারীপুরের ৬টি থানা নিয়ে ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর বিশিষ্ট সমাজ সেবক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়তউল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুর নামে একটি নতুন মহাকুমা সৃষ্টি হয়। মাদারীপুর থেকে বিভক্ত হয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রতিষ্ঠার মুলে ছিল পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। কারণ তৎকালীন পূর্ব মাদারীপুর তথা আজকের শরীয়তপুরে কোন রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট ইত্যাদি পল্লী অবকাঠামো ছিল না বললেই চলে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-আদালত সহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও এ অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সে সময়ে আন্তজেলা সড়ক যোগাযোগতো দূরের কথা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা ছিল না। আরো স্পষ্ট করে বলতে হয়, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যাওয়ার সুষ্ঠু কোন ব্যবস্থা তখন ছিল না। পাকা রাস্তা ছিল তখনকার অলীক স্বপ্ন। কাঁচা রাস্তারও কোন অস্তিত্ব ছিলনা তখন। যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। তাও সীমিত আকারে এবং বর্ষা মৌসুমে। পায়ে হেটেই মানুষ দৈনন্দিন কাজ কর্মে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেত। এ যাওয়া আসার পথে দুই তিন দিন সময় অতিবাহিত হতো। মামলা, মোকদ্দমা, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি কাজে মহকুমা সদর মাদারীপুর যাতায়াত ছিল কঠিন কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। এ অঞ্চলটি নদী বৈশিষ্ট হওয়ার ফলে এখান থেকে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম যাওয়া ছিল কঠিন দুঃসাধ্য ব্যাপার। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র বাহন গয়না নৌকা। পরবর্তীতেহ গয়নার নৌকার সঙ্গে ছোট লঞ্চ যুক্ত হয়। কিন্তু এ সব যানবাহনের অবস্থান ছিল ডামুড্যা, সুরেশ্বর, ওয়াপদা কিংবা দুলার চরে। যেখানে পৌঁছাতে হতো পায়ে হেঁটে। মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে পায়ে হেঁটে উল্লেখিত স্থানে গিয়ে ঢাকা যাওয়ার নৌকা বা লঞ্চ ধরতে হতো। কখনো কখনো নির্দিষ্ট ঘাটে পোঁছাতে না পারলে পরের দিন পর্যন্ত ঘাটে বসে থাকতে হতো। ঐ সব নৌকা ও ছোট লঞ্চে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দেয়া ছিল জীবণ মৃত্যুর স্বন্ধিক্ষণ। জীবন বাজি রেখে দূরন্ত পদ্মার উত্তাল ঢেউ ভেঙ্গে মানুষ ঢাকা যাওয়া আসা করতো। পাশ্ববর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর কিংবা বরিশাল যাওয়ার উপায়ও একই ছিল। শুধু মাদারীপুর লঞ্চে এবং পায়ে হেটে আড়িয়ল খা পাড় হয়ে যাওয়া যেত। এ অঞ্চলের মানুষের যে অবর্ননীয় দুঃখ দুর্দশার কথা ভোলার মত নয়। এহেন করুন অবস্থা উত্তরণের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালের ১মার্চ শরীয়তপুর মহকুমা জেলায় উন্নিত হয়। ধীরে ধীরে শিশু শরীয়তপুর বেড়ে উঠতে থাকে। একে একে রিদ্ধ হয়। তবে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নিত হওয়ার পরও এ জনপদকে অবহেলা করে উপেক্ষা করে গেছেন সকলেই। যতটা না ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক কারণ তার চেয়ে বেশী রাজনৈতিক কারণে এ জনপদ উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। এ জনপদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজরিত জনপদ, এখানকার মানুষ বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। এখানকার মানুষ নৌকা ভক্ত। স্বাভাবিকভাবেই তারা নির্বাচনের সময় নৌকা প্রতীকে বিপুল পরিমাণ ভোটে দিয়ে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত করে। সে অপরাধে ৭৫ পরবর্তী স্বৌরশাসকগণ এ অঞ্চলের সঙ্গে বিমাতা সুলভ আচরণ করে উন্নয়ন অগ্রগতি বঞ্চিত করে রাখেন। ফলে যে প্রত্যয়ে মহকুমা মহাকুমা থেকে জেলায় রূপান্তরিত হয়েছিল, সে প্রত্যয় অধরাই থেকে গেছে। কাঙ্খিত উন্নয়ন অগ্রগতি ঢেউ এখানে লাগেনি। ১৯৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত এ অঞ্চল ছিল চির অবহেলিত, চির বঞ্চিত। ৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে দুঃশাসন কায়েম হয়। যাহা ১৯৯৬ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ১৯৯৬ সালে গণমানুষের ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ২১ বছর পর জাতির জনকের কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এর পর শুরু হয় শরীয়তপুরের উন্নয়ন। ৯৬তে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিছিয়ে পড়া উন্নয়ন বঞ্চিত জেলা সমূহকে উন্নয়নে অগ্রাধিকারের আওতায় আনেন। সে সুযোগে তৎকালীন সরকারের নীতি নির্ধারক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতির জনকের একনিষ্ঠ ঘনিষ্ট সহচর প্রয়াত জননেতা মরহুম আব্দুর রাজ্জাক পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পেয়ে অবহেলিত শরীয়তপুরকে ঢেলে সাজানোর কাজে আত্ম নিয়োগ করেন। তার পরিকল্পনা, তার চিন্তা-চেতনা ও সহযোগিতায় আজকের শরীয়তপুর আধুনিকায়নে অগ্রযাত্রায় সামিল। প্রয়াত জননেতা, সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথমেই শরীয়তপুরকে আধুনিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত করেন। কারণ তার জানা ছিল নদী বেষ্ঠিত শরীয়তপুরকে আধুনিক ভাবে গড়ে তুলতে হলে যোগাযোগ নেটওয়ার্কে যুক্ত করা জরুরী। তাই তিনি সময় ক্ষেপণ না করে চাঁদপুরের পশ্চিম পার্শ্বে ও শরীয়তপুরে পূর্ব পার্শ্বে প্রবাহমান মেঘনা নদীর দুই তীরে হরিনা ঘাট ও নরসিংহপুর ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু করে মংলা-চট্টগ্রাম দুই বন্দরের মহাসড়কের সঙ্গে শরীয়তপুরকে সম্পৃক্ত করেন। এতে করে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম, সিলেট ও প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগ এবং বরিশাল ,খুলনা বিভাগ ও প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ সমূহের জেলাগুলোর সঙ্গে আন্তজেলা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক আওতায় এসে যায় শরীয়তপুর। শুধু পূর্বঞ্চল নয়, এর ফলে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সমূহের সঙ্গে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সেতুবন্ধন স্থাপিত হয়।
জনাব আব্দুর রাজ্জাক মুন্সীগঞ্জ জেলার দক্ষিণ পাশে ও শরীয়তপুরের উত্তর পাশে প্রবাহমান উত্তাল পদ্মার দুই প্রান্তে মাওয়া-মাঝির ঘাট ফেরি সার্ভিস চালু করে রাজধানী ঢাকাকে শরীয়তপুরের দোরগোড়ায় নিয়ে এসে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি পুরণ করেছেন। এখন ইচ্ছা করলে যে কোন সময় শরীয়তপুর থেকে ঢাকা যাতায়াত করা যায়। যা ৯৬ এর পূর্বে কল্পনাও করা যেত না। জনাব আব্দুর রাজ্জাকের প্রচেষ্টায় একে গড়ে উঠে অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, স্কুল কলেজ মাদ্রসা, মসজিদ, মন্দির। তৈরী হয় সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো, অসখ্য ব্রিজ, কালর্ভাট মহাসড়ক, সড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, গ্রামীণ সড়ক। তিনি স্থাপন করেন নানা ধরণের সরকারি স্থাপনা। যার ফলে শরীয়তপুর আধুনিকায়নের পথ পরিক্রমায় অনেক দূর এগিয়ে যায়। তাছাড়া আব্দুর রাজ্জাকের প্রচেষ্টা শরীয়তপুর টু বরিশাল ভায়া গোসাইরহাট মুলাদী সড়কের জন্য বরাদ্দ দিয়ে যান।যাহার ফলে বরিশাল বিভাগের সাথে ঢাকা এবং চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রামের যোগাযোগের নতুনমাত্রা। যদিও জননেতা আব্দুর রাজ্জাক চেয়েছিলেন সুরেশ্বর হয়ে লৌহজংয়ে পদ্মা সেতু হোক। যাহাতে ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে শরীয়তপুরে মধ্য দিয়ে সুরেশ্বরে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকাকে সংযুক্ত করা। যাইহোক ২০০১এ জামায়াত বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় এসে শরীয়তপুর থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ কেঁটে নিয়ে পুনরায় বঞ্চিত করেন শরীয়তপুরকে। জোট সরকারের দুঃশাসনের পড়ে ৯৬তে গড়ে উঠা নানা অবকাঠামো, স্থাপনা সংস্কারের অভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতি সাধন হয়। বিশেষ করে মহাসড়ক, সড়ক, গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। যা ২০০৯ এ ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা নুতনভাবে সংস্কার, নির্মাণের কাজ শুরু করেন। যার ফলে ধীওে ধীরে শরীয়তপুর তার হারানো জৌলুস ফিরে পায়। সম্প্রতি শরীয়তপুরের পশ্চিম পাশে প্রবাহমান আড়িয়াল খা নদীর উপর আচমত আলী খান চিন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু স্থাপিত হওয়ার সড়ক পথে এক সময়ের দুর্গম মাদারীপুর যাওয়া এখন মাত্র ৩০ মিনিট সময়ের ব্যাপার। এটা সম্ভব হতো না যদি প্রধানমন্ত্রী না হতেন জাতির জনকের কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় অবহেলিত জনপদ একে একে রিদ্ধ হচ্ছে। পদ্মসেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে যা পরিপূর্ণতা পাবে অচিরেই। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের দাবি সর্ব প্রম শরীয়তপুর থেকেই উঠেছিল। বর্তমান শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার ছিলেন পদ্মসেতু বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি। তিনি এ জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম সময় অর্থ ব্যয় করেছেন। তার এ দাবি এক সময়ে গণমানুষের দাবিতে রূপান্তির হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ভালোভাবেই উপলব্দী করেন। ৯৬তে ক্ষমতায় বসে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ২১ জেলার জেলার যাতায়াতের প্রধান অন্তরায় পদ্মানদীতে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেন। কিন্তু দূরভাগ্যক্রমে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রে তিনি সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। ক্ষমতায় আসেন জামায়ায় বিএনপি জোট সরকার। ক্ষমতায় এসেই তারা স্বভাব সুলভভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্প বন্ধ করে দেন। এতে ভাগ্যহত হয় ২১ জেলার মানুষ। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের নিকট ঋণ মঞ্জুরী সহায়তা প্রাপ্ত হন। শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। এতে খুশি হতে হতে পারেননি জামায়াত-বিএনপি। তারা তাদের দোসর সুদি ব্যবসায়ী অধ্যাপক ইউনুছ গংদের কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাংক কে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন প্রকল্প থেকে ভাগিয়ে নিয়ে জনতার কপালে ছেড়া জুতা নিক্ষেপ করেন। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা কঠিন দুঃসময়ে নিজস্ব অর্থয়ানে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন ঘোষণা দেন। সেই দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছিল তা উচ্চাভিলাশী ছিল। কিন্তু উচ্চভিলাশী আকঙ্খাও যে সততার সাথে বাস্তবায়ন করা যায় তা দেখালেন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু আজ স্বপ্নে না, চোখের সামনে। এ সেতু চালু হলে শরীয়তপুর জেলা রাজধানী ঢাকা শহরের সন্নিকটে এসে যাবে। তাছড়া শরীয়তপুর ১ আসনের সাংসদ উন্নয়নের পথিক জননেতা ইকবাল হোসেন অপুর প্রচেষ্টায় পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুর শহর পর্যন্ত চারলেন বিশিষ্ট রাস্তার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে এখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।
ব্যাপক কমসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আয় রোজগার বেড়ে যাবে। জীবন যাত্রার মান বেড়ে যাবে। সে কথা মাথার রেখে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শরীয়তপুরকে একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা এখনই করার প্রয়োজন। তা না হলে এক সময় ইচ্ছা থাকার পর সব কিছু ঢেলে সাজানো সম্ভব হবে না। অচিরেই পদ্মা সেতু চালু হবে। মেঘনা নদীতে মেঘনা সেতুনির্মাণের দাবি দিন-দিন জোরালো হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে ইনশাল্লাহ মেঘনা সেতুও নির্মাণ হবে। যা সময়ের ব্যাপার। শরীয়তপুরের কৃতি সন্তান শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি পানি সম্পদ উপমন্ত্রী জননেতা একেএম এনামুল হক শামীম মেঘনা সেতু সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। মেঘনা নদীর নীঁচ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে এবং মাদারীপুর থেকে নরসিংহপুর ঘাট পর্যন্ত চারলেনের রাস্তার কাজও একনেকে পাশ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া জাজিরা থেকে নড়িয়া, সখীপুর হয়ে নরসিংহপুর ঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি প্রসস্ত হচ্ছে । ফলে পশ্চিমাঞ্চলের জেলার পরিবহন পদ্মা পার হয়ে ঢাকা না ঢুকে পদ্মার পাড় থেকে জাজিরা হয়ে নড়িয়া সখীপুর হয়ে চাঁদপুর দিয়ে কম সময়ে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। শরীয়তপুর জেলার উত্তর-পশ্চিমে পদ্মা সেতুর অবস্থান। পূর্বে প্রস্তাবিত মেঘনা সেতুর অবস্থান। দক্ষিণে আবুপুরে
কীর্তনখোলা নদীতে শরীয়তপুর-৩ আসনের এমপি জননেতা নাহিম রাজ্জাক ইতোমধ্যেই ফেরী সার্ভিস উদ্ভোধন করে বরিশালের সঙ্গে শরীয়তপুরের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। আগামী শরীয়তপুর শহর থেকে আবুপুর পর্যন্ত সড়ক প্রসস্তকরনে কাজ চলছে। কীর্তনখোলা নদীতেও ব্রিজের প্রস্তুতি চলছে এবং এক সময় তা বাস্তবায়ন হবে এবং খাসেরহাট হয়ে কালকিনী সড়কটিতেও গাড়ী চলছে এর ফলে শরীয়তপুর হবে বাংলাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্কের কেন্দ্র বিন্দু। অথাৎ শরীয়তপুর জেলা থেকে চারদিকের সকল জেলায় সেই নদীর উপর সড়ক পথেই যাওয়া যাবে। বিধায় পরিকল্পিত শরীয়তপুর গড়ে তুলতে হবে। এখন থেকে পরিকল্পিত রাস্তাঘাট তৈরীতে মনোনিবেশ করে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরী। পদ্মা সেতু প্রস্তাবিত মেঘনা সেতু, ভবিষ্যৎ কীর্তন খোলা সেতু ও আড়িয়াল খাঁ সেতুর সংযোগ স্থলে মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, পল্লী সড়ক নির্মাণ করতে হবে। তার সাথে মিল করে হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা জরুরী। এ সংক্রান্ত একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। বিশেষ করে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী, সাবেক জাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য, জননেতা এনামুল হক শামীম এমপি’র সুদৃষ্টি কামনা করছি। যিনি আধুনিক শরীয়তপুর বিনির্মাণে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সাথে সাথে শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি, কোটি যুবকের প্রাণের স্পন্দন, জননেতা ইকবাল হোসেন অপু ও শরীয়তপুর-৩ আসনের এমপি, প্রয়াত জননেতা আব্দুর রাজ্জাকের সুযোগ্য সন্তান, জননেতা নাহিম রাজ্জাকের সুদৃষ্টি কামনা করছি। মাননীয় এমপি মহোদয়গণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, শরীয়তপুরের চার পাশে প্রবাহমান নদীতে সেতুর অবস্থানের কথা চিন্তা করে, মহা-সড়ক, সড়ক সহ অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিকল্পনা প্রণোয়ন করা এখন সময়ের দাবী। এ সংক্রান্ত কাজে নগর স্থপতিদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। সকলের সহায়তা নিয়ে একটি মহা পরিকল্পনা গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকলের জন্য বাসযোগ্য, হংকং আদলে শরীয়তপুরকে গড়ে তোলা সম্ভব। তাছাড়া পদ্মার পাড়ে বিমান বন্দর, আধুনিক মার্কেট, অলিম্পিক ভিলেজ, ক্যান্টমেন্ট, পর্যটনকেন্দ্র, তাঁতপল্লী, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ইত্যাদি নির্মিত হওয়ার পথে। এ সম্ভবনা যদি অসম্ভব রূপান্তরিত হয় তা হলে একদিন শরীয়তপুর হবে যানজটের অঞ্চল। চার দিক দিয়ে যখন শরীয়তপুর গাড়ি ঢুকবে তখন পরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থার অভাবে যানজট লেখে যাবে। যা একটি আধুনিক শহরের জন্য বেমানান। এতে করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যহত হবে। যা কারোই কাম্য নয়। শরীয়তপুরের শ্রী বৃদ্ধি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য ৬টি উপজেলা ও সকল ইউনিয় পর্যায়ের ভাঙ্গা রাস্তা জরুরীভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন।