শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
সুপ্তা চৌধুরী।
শরীয়তপুর পৌরসভার কাশাভোগ এলাকায় স্থানীয় কতিপয় চাঁদাবাজ এক দিন মজুরের কাছে করোনা মহামারীর সময় ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করেছে ওই চাঁদাবাজরা। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থেকে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সামসুল হক চৌকিদার, মোস্তফা চৌকিদার, আহাম্মদ চৌকিদার, জাকির চৌকিদার, মনির চৌকিদার, ইসমাইল চৌকিদাররা এলাকায় খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ভূমি দস্যুতাসহ ত্রাস করে বেড়ায়। চাঁদাবাজি ছাড়া তাদের আর কোন বৈধ রোজগারের পথ নাই। এদের চাহিদা মতো চাঁদা না পেলে যাদের কাছে চাঁদা দাবী করা হয় তাদের বাড়ি-ঘরসহ পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালায় এই চাঁদাবাজরা।
মামলার বাদী ইদ্রিস চৌকিদার বলেন, চাঁদাবাজরা ২০ মার্চ তারিখে আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি চাঁদার টাকা দিতে না পারায় গত ২৭ মার্চ আংগারিয়া বাগদী বাজারের নিকট কাশাভোগ মসজিদের দক্ষিণ পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোস্তফা চৌকিদার তার লোকজন নিয়ে আমাকে গালিগালাজ ও মারধর করে। পরে স্থানীয় মুরব্বিদের মধ্যেস্থতায় চাঁদাবাজদের সাথে আপোষ-মীমাংসা হই। আমার নিকট আর চাঁদা দাবি করবে না বলে শালিশিদের উপস্থিতিতে চাঁদাবাজরা জানায়। পরবর্তীতে চাঁদাবাজ চক্রটি আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং চাঁদার দাবিতে আবারও হুমকি ধামকি দিতে থাকে।আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়েছে চাঁদাবাজরা। চাঁদা না দেওয়ায় ১৮ এপ্রিল সকাল অনুমান ১০ টায় চাঁদাবাজগণ দেশীয় ধারালো অস্ত্র রামদা, টেটো ও লাঠিশোটা নিয়া চাঁদবাজরা আমার বাড়ির সামনে এসে আহম্মদ চৌকিদার আমার নাম ধরে ডাকাডাকি করে আর বলে, ‘শালার বেটা সাহস থাকলে ঘর থেকে বাহিরে আয়। দেখি তোর বুকের পাটা কত বড়’। চাঁদাবাজদের ডাক-চিৎকার শুনে ভয়ে আমি পুকুর পার থেকে দৌড়ে মরণ চৌকিদারের ঘরে পালাই। তখন আমাকে না পেয়ে চাঁদাবাজরা আমার বসত ঘর কুপিয়ে ও পিটিয়ে ভাংচুর করে। এতে আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধণ হয়। এই সময় আমার ঘরের খাটের বিছানার নিচ থেকে ২৭ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। এছাড়াও আমার বসত ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভেঙ্গে ক্ষতি সাধান করেছে।
আমি মরন চৌকিদারের ঘরে আছি বুঝতে পেরে চাঁদাবাজরা মরণ চৌকিদারের ঘরের টিনের বেড়া কুপিয়ে ক্ষতি সাধন করে। তখন ঘরের পিছনের দরজা দিয়ে আমি দ্রুত পালিয়ে আমার ফুফা নুরুল হক মোল্যার বাড়ি আশ্রয় নেই। চাঁদাবাজদের ভয়ে আমর জীবন শঙ্কায় আছে। আমি এই সব চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ কামনা করছি।
প্রতিবেশী আনিসলাম বলেন, তারা ইদ্রিসকে মারতে এসেছে শুনে আমি সামনে আসি। তখন চাঁদাবাজরা ষড়যন্ত্র করে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। আমার কি অপরাধ তা আমার জানা নাই। আমি এর বিচার চাই।
কুদ্দুছ চৌকিদার বলেন, আসামীরা আমার ভাইয়ের কাছে সব সময় চাঁদা চাইতো। চাঁদা দিতে না পারায় আজকে আমার ভাইকে চাঁদাবাজরা মারতে এসেছে। আমি এর সঠিক বিচার দাবি করছি।
সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রী ইরানী মল্লিক নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ালে তার বাড়ির সামনে চাঁদাবাজরা বেড়া দিয়ে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ এসে বেড়া সরিয়ে দেয়।
অভিযুক্ত আহাম্মদ চৌকিদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাদের বাড়িঘর তারা নিজেরাই ভাংচুর করে আমাদের ফাঁসাতে চেষ্টা করছে। আমাদের বিরুদ্ধে যে চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। পুলিশ আমাদের দু’ পক্ষের দু’জন ধরে নিয়েছিলো, পরে সঠিক ঘটনা জেনে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।
পালং থানার ওসি তদন্ত আশরাফুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজির একটি অভিযোগ এসেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগটি ভিত্তিহীন মনে হচ্ছে।অভিযোগকারীরা তাদের নিজেদের ঘর নিজেরাই কুপিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় আমরা তাৎক্ষণিক তদন্ত করেছিলাম।