শরীয়তপুর জজ কোর্টের শিক্ষানবীশ এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে কাজী দ্বারা বিয়ের নাটক সাজিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই গৃহবধুর অভিযোগ, একবছর আগে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা করার নাম করে প্রেমের সম্পর্ক ওঠে, একপর্যায়ে প্রতারণা করে দীর্ঘদিন ধর্ষণ করে ওই শিক্ষানবীশ আইনজীবী।
পরবর্তিতে বিয়ের কথা অস্বীকার করায় ওই শিক্ষানবীশ আইনজীবীর বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগ করেছে দুই সন্তানের জননী ওই গৃহবধু। এদিকে, রেজিষ্টার ছাড়া ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে পড়ানো হয়েছে বলে দাবি বিবাহ নিবন্ধক কাজীর। তবে বিয়ে বিষয়ে অস্বীকার করেছেন ওই শিক্ষানবীশ আইনজীবী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার দিনারা গ্রামের মকসেদ সিকদারের ছেলে রাশেদ সিকদার দীর্ঘদিন যাবৎ এক প্রবাসী গৃহবধুর সাথে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ের সূত্র ধরে পরিচয় হয়। এরপর থেকে ওই গৃহবধুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে শরীয়তপুর জজ কোর্টের ওই শিক্ষানবীশ আইনজীবী রাশেদ সিকদার তার পরিবারের লোকজন দিয়ে ওই গৃহবধুকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ও আগের ইতালী প্রবাসী স্বামীর সংসার ভেঙ্গে দেয়।
গত ২০ জানুয়ারি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাও ইউনিয়নের বিবাহ নিবন্ধক কাজী আতাউর রহমান সেলিমের মাধ্যমে ওই শিক্ষানবীশ আইনজীবী রাশেদ সিকদারের সাথে ওই গৃহবধুকে ইসলামি শরা-শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ সম্পুর্ণ করেন। বিয়ের পর থেকে রাশেদ সিকদার ওই দুই সন্তানের জননী ওই গৃহবধুর সাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করেন। পরবর্তিতে ওই গৃহবধু তার কাবিন নামা চাইলে রাশেদ সিকদার তা দিতে অস্বীকার করেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়।
এ ঘটনা নিয়ে গত ১০ মে ওই গৃহবধুকে মারপিট করে বিয়ের কথা অস্বীকার করে বাসা থেকে চলে যায় রাশেদ। ওইদিনি ওই গৃহবধু বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। ভর্তির দুইদিনের মাথায় ওই গৃহবধুর আবস্থার অবনতি হলে চিকি’সকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। দীর্ঘ পনের দিন চিকি’সা শেষে বাড়িতে ফিরে শিক্ষানবীশ আইনজীবীর রাশেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে কোন আইনজীবী রাশেদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে ও চালাতে অস্বীকার করায় গত ১৭ মে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের দেড় মাসেও এ ঘটনার কোন সুরাহা করতে পারেনি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।
ওই গৃহবধু অভিযোগ করে বলেন, আমার একটি মামলা নিয়ে আদালতে যাওয়া আসার সুবাদে রাশেদের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর রাশেদ আমার ওই মামলা একপর্যায়ে খারিজ করে দিয়ে আমাতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তিতে ওর চাপের মুখে পড়ে রাজি হতে বাধ্য হই। আমাদের পাঁচ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে পড়ায় সেলিম কাজী। এরপর থেকে আমাদের সংসার ভালই চলছিল। কিন্তু আমি যখন রাশেদের থেকে কাবিন নামা চাই তখন রাশেদ ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারপিট করে। আমি রাশেদের স্ত্রীর মর্যাদা চাই। এর জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন ওই ভুক্তভুগি।
এ বিষয়ে শিক্ষানবীশ আইনজীবী রাশেদ সিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি মিথ্যা দাবি করে বলেন, একটা মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাকে আমি চিনি। আমি যেখানে ভাড়া থাকি ওই পাশের আরেক ভবনে ওই নারী ভাড়া থাকতেন। কিন্তু আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।
এদিকে, ছয়গাও ইউনিয়নের বিবাহ নিবন্ধক কাজী আতাউর রহমান সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিয়ের পড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, রাশেদ ভাইর সাথে আমার ভাল সম্পর্ক আছে। একদিন রাশেদ ভাই আমাকে ফোন করে বিয়ে পড়ানোর জন্য শরয়িতপুরে যেতে বলে। আমি যখন যাই তখন দেখি সে নিজেই বিয়ে করবে। কিন্তু কাবিন দুই বছর পড়ে করে নিবে এমন শর্তে তাদের আমি বিবাহ সম্পন্ন করে চলে আসি।
শরীয়তপুর কোর্ট এলাকার বাসিন্দা দ্বীনইসলাম বেপারি বলেন, আমার বাসায় ওই মেয়েটি প্রথমে বাসা ভাড়া নেয়। বাসা ভাড়া দেয়ার কিছুদিন পর থেকে রাশেদ রাত বেরাতে চলাফেরা করতো। এনিয়ে রাশেদকে আমি কয়েকদিন সতর্কও করেছি। কয়েকদিন পরে জানতে পারি তারা নাকি বিয়ে করেছে। আমি তাদের চলাফেরা পছন্দ না হওয়ায় বাসা ভাড়া ছেড়ে দিতে বলেছিলাম। এখন তারা চলে গেছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি এড. মাসুদুর রহমান (মাসুদ) বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। জুনিয়র আইনজীবী রাশেদের সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তারা বিবাহ করেছিল বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু এখন যে ঘটনা রাশেদ ঘটিয়েছে সেটা দু:খ জনক। আমাদের কাছে যদি ওই গৃহবধু আভিযোগ করে। তাহলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন তাকে আইনি সহযোগিতা দিবে।
শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. আবু সাহিদ বলেন, গত মাসের ১৭ তারিখে এক নারী আমাদের কাছে রাশেদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমার অভিযোগটি সত্যতা যাচায়ের জন্য দুইজনকে ডাকা হবে। এরপর যদি অভিযুক্ত অপরাধি হিসেবে গণ্য হয়। তাহলে তাকে দেয়া জুনিয়র আইনজীবী সনদ বাতিল করা হবে এবং বাতিল কপি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে পাঠানো হবে।