![](https://shariatpurjournal.com/wp-content/uploads/2020/08/2020-08-18_22.07.16.jpg)
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর জন্য দৈনন্দিন পথ্য সামগ্রী সরবরাহে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দৈনিক প্রতি রোগীর জন্য উন্নত মানের নিয়ম মাফিক খাবার সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে। এরপরও গত ২৬ জুন (২০১৯-২০) অর্থ বছরের ঠিকাদারের মাধ্যমেই (২০২০-২১) অর্থাৎ চলতি বছরেও খাদ্য সামগ্রীর কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যদিও সরকারি দরপত্রে রোগীদের খাবার সরবরাহ’র নিয়ম নির্দেশনাও মানছেন না ঠিকাদার। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান এন্ড সন্স খাদ্য সরবরাহ করছে।
হাসপাতাল সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, মেসার্স খান এন্ড সন্স একাই পথ্য সরবরাহ করছে। বিভিন্ন নামে একাধিক প্রতিষ্ঠানিক নাম ব্যবহার করে প্রায় কয়েক যুগ ধরে একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে পথ্য সরবরাহ কার্যক্রম।
তাছাড়া শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ঠিকাদার তিনি একাই। চলতি অর্থ বছরে ৩০ মে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নতুন করে টেন্ডার না হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির মালিক নিয়ম মাফিক খাবার সরবরাহ করছে না।
বিভিন্ন মালামালের বাজার মূল্য থেকে বেশি দাম ধরারও অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
সরকারি হাসপাতালে পথ্য সরবরাহের নিয়ম অনুযায়ী একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন ১২৫ টাকা করে খাবার বরাদ্দ থাকে। সকালের নাস্তার জন্য ৫২.০৮টাকা ও দুপুর ও রাতের জন্য ৭২.৯২ টাকা। তাছাড়া ১ নং পথ্য হিসেবে একজন রোগী ৮৩ গ্রাম উন্নত মানের পাউরুটি (পিস করা) ১পাউন্ট চিড়া, ১৮ টাকা ফার্মের ডিম ১টি ১৭ টাকা, দেশি কলা ১টি ১৬ টাকা এবং চিনি ৯০ পয়সা, সকালে এই মূল্যের খাবার দেওয়ার কথা। সেখানে পাউ রুটি দিলে চিড়া দেওয়া হয়না এবং চিড়া দিলে পাউরুটি দেওয়া হয়না। পঁচা রুটি কাঁচা পঁচা কলা যা খাওয়ার অযোগ্য বলে দাবি করেন রোগীরা।
আর দুপুর ও রাতে খাবারের জন্য উন্নত মানের ইরি চাল ভাত ২৭৯ গ্রাম, দেশি মুশুরী ডাল ইত্যাদি সহ প্রতিদিন থাকবে ব্রয়লার মুরগির মাংস। যদিও বাজার দর এর চেয়ে কয়েকগুন বেশি ধরা আছে মাংস নারিভূরি বাদে ৪৬০টাকা কেজি, জনপ্রতি পাবে ৬৮ গ্রাম মাংস।
কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কোনো রোগী নিয়ম মাফিক খাবার পাচ্ছেন না। খাবারের পরিমাণও কম। নিম্নমানের চালের ভাত ১০ মিনিট পরেই ভাত থেকে গন্ধ বের হয়, শুধু পানি ডাল, কাঁচা তেলের তরকারি, বাসি খাবার সরবরাহ করা হয়। যা কোনো রোগী খেতে পারছে না। ন্যূনতম সামর্থবানরা বাইরের থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করছেন রোগী ও স্বজনরা।
ভর্তিকৃত রোগী অাজগর বেপারী (৫০), জয়নাল অাবেদিন (৪৫), শাহালম (৩৫), বিল্লাল(২৭) সহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সকালে বাসি রুটি সাথে কাচা কলা খেতে দেওয়া হয়েছে। দুপুরেও নিন্মমানের চালের ভাত, নামে মাত্র এক টুকরা মাংস। যা খাওয়ার উপযোগি না। এ কারণে বেশির ভাগ রোগী খাবার না খেয়ে বহিরে ফেলে দিচ্ছে। এমতবস্থায় রোগীদের খাবারের মান উন্নয়নে নজরদারী বাড়ানোর দাবী রোগী ও স্বজনদের।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান এন্ড সন্স এর মালিক অাব্দুল্লাহ অাল মামুন খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা থেকে এসে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন। এরপর তাকে আর ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুর জেলায় বসবাসরত ২০ লাখ মানুষের বেশিরভাগই এ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। বাড়ছে হাসপাতালের অবকাঠামো। কেনা হয়েছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। তবু এর চিকিৎসা সেবা নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। একটু জটিল রোগী হলেই রেফার্ড করা হয় ঢাকার হাসপাতালে। কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিতে বছরের পর বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকে সরকারি অর্থে কেনা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আর চিকিৎসক-কর্মচারী ও যন্ত্রপাতির সংকটসহ নানা কারণে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ, কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আএমও) সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, গত ২মাস ধরে হাসপাতালের ঠিকাদার খাবারের বিষয়ে আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেন না। অামি খোজ নিয়ে বিষয়টি দেখবো। প্রয়োজনে সরবরাহকৃত মালামালের বিল দেওয়া হবে না। এছাড়া নতুন টেন্ডারের বিষয়ে আবার রি-টেন্ডার অাহবান করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।