নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শরীয়তপুর-২ আসনে ১৯৭৯ সাল থেকে টানা ৪০ বছরে সাত বার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী। বার্ধক্যজনিত কারণে এবার তিনি নির্বাচন করবেন না বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে বিএনপি থেকে অর্ধ ডজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে দুই জেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এ আসনটি নড়িয়া উপজেলা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানা নিয়ে গঠিত। এ আসনে নড়িয়া উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং সখিপুর থানার ৯ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৪ জন। তবে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ হলে মোট ভোটারের সংখ্যা আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল হক হাওলাদার এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরই নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। স্বাধীন বাংলাদেশে আততায়ীর হাতে নিহত প্রথম এমপি তিনি। এরপর একই বছর উপ-নির্বাচনে এই আসনে আ’লীগের প্রাক্তন এম.এন.এ ডাক্তার আবুল কাশেম নির্বাচিত হন। ‘৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী, ‘৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির টি.এম গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, ‘৮৮ সালে ৪র্থ নির্বাচনে জাপার টি.এম গিয়াস, ‘৯১ সালে ৫ম সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী, ‘৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র ডাক্তার কে.এ জলিল, ‘৯৬ সালের ১২ জুন ৭ম সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী, ২০০১ সালে ৮ম সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী, ২০০৮ সালে ৯ম নির্বাচনে কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আ’লীগ থেকে কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী নির্বাচিত হন।
এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব দীর্ঘকালের। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী ‘৭৯ সালে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যেমন একদিকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করেন তেমনি তার এক গুয়েমি আচরণে দলের অনেক পরীক্ষিত ও দায়িত্বশীল নেতাকর্মী তার কাছ থেকে দূরে সড়ে গেছেন। গত দুই দশকে দলের অভ্যন্তরে হানাহানি, সংঘাত, রক্তপাতে নিহত হয়েছেন একাধিক দলীয় কর্মী। বিএনপি’র অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব থাকলেও তা সহিংসতায় রূপ নেয়নি কখোনই। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন কয়েকজন। তারা হচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ.কে.এম এনামুল হক শামীম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার এবং বর্তমান সাংসদ কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলীর পুত্র ডাক্তার খালেদ শওকত আলী।
অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান কিরণ, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জামাল শরীফ হিরু, সাবেক এমপি টি.এম গিয়াস উদ্দিন, সাবেক এমপি ডাক্তার কে.এ জলিল ও বিএনপি নেতা কর্ণেল (অবঃ) এস.এম ফয়সাল আহমেদ।
এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের আসন হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দাবি করেন নৌকা প্রতীক যে পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন। অপরদিকে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনে করেন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরিন কোন্দলের সুযোগে তারা এ আসনটি দখল করে নিতে পারবেন। বৃহত্তর দুটি দলের বাইরে অন্য কোনো দলের সাংগঠনিক ভিত্তি এ আসনে লক্ষণীয় নয়।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ.কে.এম এনামুল হক শামীম স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ‘৮৬ সালে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, ‘৮৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে জাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পর পর তিনবার সদস্য ও সহ-সভাপতি পদ লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। টানা ৪ বছর বছর তিনি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় বিএনপি-জায়ামাত জোট সরকারের হাতে বারবার নির্বাতনের শিকার হয়েছেন। শামীম আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন একাধিকবার। ২০১২ সালে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। এনামুল হক শামীম রাজনীতির পাশাপাশি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাথে জড়িত রয়েছেন এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকেও তার অংশীদারিত্ব রয়েছে। শামীমের হাত ধরে শুধু নড়িয়া-সখিপুরেই নয়, গোটা শরীয়তপুর জেলার শত শত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী ঢাকা শহরের নামিদামি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প খরচে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছে। তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সহায়তা করেছেন অনেককে।
এনামুল হক শামীম চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলীয় নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তিনি এলাকার নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তা করছেন। সম্প্রতি তিনি নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়নের কাজ শুরু করেছেন ব্যাপকভাবে। দলীয় মনোনয়নপপ্রাপ্তি বিষয়ে শামীম বলেন, তিনি এর আগেও একই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনেও চাইবেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই কাজ করবেন। তিনি মনে করেন নিজের মনোনয়নের চেয়ে তার কাছে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের বিষয় আগামী নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা। সে জন্য তিনি রাতদিন তৃণমূল থেকে কেন্দ্র আর কেন্দ্র থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ করে যাচ্ছেন।
সুলতান মাহমুদ সিমন বর্তমানে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর হিসেবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নড়িয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও নড়িয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন। পাকিস্তান আমল থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি এক বীর সেনানী। নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক, জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান ও মাস্টার্সসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। একজন স্বনামধন্য আইজীবী হিসেবে তার যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। ২০০১ সালে তিনি এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে প্রায় ৩১ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। তিনি আগামী নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী।
অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর মহিলা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। ১/১১-এর সময় তিনি শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদিকা থাকাবস্থায় ২০০৮ সালে নড়িয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য মনোনীত করা হয়। সাংসদ মনোনীত হওয়ার পর তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সহায়তা প্রদান করেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি শরীয়তপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
ডাক্তার খালেদ শওকত আলী বর্তমান সাংসদ কর্ণেল শওকত আলীর পুত্র। তিনি দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত খালেদ মধ্যপ্রাচ্যে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এরপর দেশে এসে তিনি তার বাবা শওকত আলীর হাত ধরে এলাকার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় বীর কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলীর সাথে খালেদ শওকত নির্বাচনী এলাকার সব সভা-সমাবেশে সম্পৃক্ত হন। এলাকার উন্নয়নে তার পিতাকে সবসময় দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন। খালেদ ‘৭১ ফাউন্ডেশন নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি, নড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও মাজেদা হাসপাতালের কর্ণধার। এছাড়া সামাজিক সংগঠনের সাথেও তিনি জড়িত রয়েছেন। বেশ কিছুদিন যাবৎ ডাঃ খালেদ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। তার পিতা কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী ৬ বার এই আসন থেকে আ’লীগের টিকিটে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তার বয়স ৮০ বছর অতিক্রম করায় এবং স্বাস্থ্যের ক্রমাবনিত ঘটায় তার পারিবারিক সিদ্ধান্ত মতে পুত্র খালেদ শওকত আলীর জন্য দলীয় মনোনয়ন চাওয়া হবে। খালেদ শওকত আলীর প্রত্যাশা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শওকত আলীর অবদান এবং নির্বাচনী এলাকায় দীর্ঘ ৪ দশক আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার ভূমিকার কথা বিবেচনা করে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী শফিকুর রহমান কিরণ বর্তমান শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি স্কুলজীবনে রোভার স্কাউটের গ্রুপ লিডার হওয়ার সুবাদে ‘৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সান্নিধ্য লাভ করেন। সেই থেকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে তার দলের প্রতি আকৃষ্ট হন। তার জন্ম পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর জেলায়। পিতা হাবিবুলস্নাহ চোকদার পাকিস্তনের গোড়ার দিকে চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের পুরনো পৈতৃক নিবাস ভেদরগঞ্জের তারাবুনিয়ায়। তিনি একজন সফল মানবসম্পদ রপ্তানিকারক। ১৯৯১ সালে তিনি শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে শরীয়তপুরে বিএনপি রাজনীতিতে আবির্ভূত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচনে কিরণ শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের সাথে নির্বাচন করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে তিনি শরীয়তপুর-২ থেকে সর্বশেষ বিএনপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮০ হাজারেরও অধিক ভোট পেয়েছিলেন। শফিকুর রহমান কিরণ ১৯ বছর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি একবার জেলার সদস্য সচিব ও একবার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিরণ তার নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে অনন্য অবদান রেখেছেন। চলাঞ্চলে তিনিই প্রথম তার পিতার নামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আগামী নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার বিশ্বাস, এই আসনে দল তাকে মনোনয়ন দেবে।
অ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরু বিএনপি’র একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবিভক্ত ঢাকা মহানগরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এরপর তিনি মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরপর দুই মেয়াদে তিনি সামসুজ্জামান দুদুর সাথে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, ২০১১ সালে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ২০১২ সালে জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি একজন নির্লোভ, নির্মোহ ও ত্যাগী নেতা হিসেবে বিএনপিতে সমধিক পরিচিত। নীতির প্রশ্নে একজন আপসহীন নেতা। জামাল শরীফ হিরু ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ সালে বিএনপির ক্ষমতা আমলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। হিরু মনে করেন, শরীয়তপুর-২ আসন থেকে ইতিপূর্বে যাদের বিএনপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে তারা কেউ বিজয়ী হতে পারেনি। তাই দলীয় বিজয় ছিনিয়ে আনতে আসন্ন নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে চান।
কর্ণেল (অবঃ) এস.এম ফয়সাল দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ঢাকায় ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৪ সালে তাকে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনোনীত করা হয়। কর্ণেল ফয়সাল শরীয়তপুরের চরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। তার বড় ভাই সৈয়দ আমির খসরু বিএনপি’র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারি করার পর অনেক প্রভাবশালী বিএনপি নেতা যখন জনদল-জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন তখন আমির খসরু শরীয়তপুরে বিএনপি পুনর্গঠনে কাজ করেন। মূলধারার বিএনপিকে তিনি সংগঠিত করে রাখেন। তার চেষ্টায় এ অঞ্চলে বিএনপি পুনর্গঠিত হয়। নির্মোহ ও ত্যাগী নেতা আমির খসরুর ছোট ভাই এবং প্রকৃত বিএনপি ভাবধারার লোক হিসেবে তিনি আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন।
টি.এম গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বিএনপি’র এ অঞ্চলে বর্ষীয়ান নেতা। তিনি শরীয়তপুর-২ আসন থেকে ৩ বার বিএনপি মনোনয়নে, ২ বার জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। জাতীয় পার্টি থেকে দুবারই নির্বাচিত হয়ে এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাসহ অনেক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড সম্পাদন করেন। টি.এম গিয়াস উদ্দিন শরীয়তপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি এবং জাতীয় পার্টির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে নির্বাচনী এলাকায় তার যোগাযোগ খুবই কম। আসন্ন নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ‘৯৬-এর একতরফা নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি নেতা ডাক্তার কে এ জলিল এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা শহিদুল ইসলাম তারা এই আসন থেকে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
শরীয়তপুর-২ আসনের ৪০ বছর পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা।
March 8, 2018 , 3:56 am