রেজি: নং - আবেদিত ২০১৬খ্রিঃ, প্রতিষ্ঠাকাল: ১মার্চ ২০১৪                       বৃহস্পতিবার,  ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,  ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,  রাত ১২:০৭

শিশুদের ঝগড়ায় জেল খাটছেন মা,পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাবা,আতঙ্কে রাত কাটছে চার শিশুর

August 27, 2020 , 8:54 am

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমখারা এলাকার মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে নুরজাহান বেগম নামে এক নারী । নারীর মামলা না নিয়ে উল্ট মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে । দুই শিশুর ঝগড়ার জের ধরে হয়রানিমুলক মামলা দিয়ে নুরজাহান বেগম নামে এক নারীকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশি ও পুলিশের বিরুদ্ধে। মামলায় আসামী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই নারীর স্বামী ইয়াছিন ছৈয়াল। আতঙ্কে আর শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে তার চার শিশু সন্তানের।
নড়িয়া থানা ও স্থানীয় গ্রামবাসী সূত্র জানায়,নড়িয়ার ভুমখারা গ্রামের বাসিন্দা নুরজাহান বেগমের স্বামী ইয়াছিন ছৈয়াল চট্রগ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন। চার শিশু সন্তান নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকেন। গত ৩ আগষ্ট নুরজাহানের ছেলে মজনু (৮) ও মোজাম্মেল (৯) এর সাথে প্রতিবেশি সালাম ব্যাপারীর ছেলে সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদের (১৪) ঝগড়া হয়। তাদের ঝগড়ায় আহাদ মাথায় আঘাত পায়। ওই ঘটনার জের ধরে ওই দিন আহাদের বাবা আব্দুস সালাম লোকজন নিয়ে মজনু,মোজাম্মেল,তার মা নুরজাহান,দুই বোন বিথী ও সাথিকে মারধর করেন। এঘটনা উল্লেখ করে ওই দিন রাতেই নুরজাহান বেগম নড়িয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ অভিযোগটি নথিভূক্ত করেননি।
পুলিশ ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বিষয়টি মিমাংসার জন্য নুরজাহানকে চাপ দিতে থাকে। নুরজাহান মীমাংসায় রাজি না হলে গত ২১ আগষ্ট সালামের স্ত্রী শিউলি বেগম নড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয় নুরজাহান ও তার স্বামী ইয়াছিন ছৈয়াল আব্দুল আহাদকে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন। ওই রাতেই নড়িয়া থানার পুলিশ নুরজাহানকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, এখানে বাচ্চারা বাচ্চার ঝগড়া হয়েছে, বড়দের কোন ঝগড়া হয় নাই। এটা একটা মিথ্যা সাজানো নাটক।

গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,নুরজাহানের চার শিশু সন্তান আতঙ্কে ঘরে বসে থাকে। বাবা-মায়ের জন্য কান্না করে। ভয়ে তারা রাতে না ঘুমিয়ে জেগে থাকে। নুরজাহানের মেয়া ও ছেলেরা মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি চায় ।
ওই ঝগড়ার ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়া আব্দুল আহাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে সে জানায়, ঈদের দুই দিন পরে বাড়ির পাশের বাজারে মজনু ও মোজাম্মেলের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মোজাম্মেলের হাতে থাকা ফিটকিরির প্যাকেট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তার মাথা কেটে রক্ত বের হয়। ওই ঘটনার সময় মজনুদের বাবা-মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
আব্দুল আহাদের সাথে কথা বলার সময় তার বাবা আব্দুস সালাম পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। শিশুদের ঝগড়ার সময় নুরজাহান বেগম ও তার স্বামী উপস্থিত ছিলেন না,এমন কথা আপনার সন্তাই বলছে অতচ তাদের দুই জনের বিরুদ্ধে হয়রানিমুলক মামলা দিলেন, এমন প্রশ্ন করলে আব্দুস সালাম বলেন,ওরা এলাকার মধ্যে খুব খারাপ। আর ওই শিশুদের মা তাদের প্রশ্রয় দেয়। এ কারনে তাকে মামলায় আসামী করা হয়েছে। আর আমি তাদের মারধর করিনি,ঘটনাটি জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে একটু দস্তাধস্তি হয়েছে।

বাদী শিউলী বেগম জানান,আমার ছেলেকে নুরজাহান দা-বডি দিয়ে কুপিয়েছে,রড দিয়ে পিটিয়েছে, তাই আমি মামলা করেছি।

নুরজাহানের সন্তানদের সাথে প্রতিবেশি আরেক শিশুর ঝগড়ার ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে আব্দুস সালাম লোকজন নিয়ে নুরজাহান ও তার সন্তানদের মারধর করেছেন। এমন ঘটনা উল্লেখ করে তিনি নড়িয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করন। ওই অভিযোগটি নথিভূক্ত না করে তদন্ত করছিলেন উপপরিদর্শক আবিদ হাসান। তিনি মুঠোফোনে বলেন,নুরজাহানের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছিল। এমন অবস্থায় এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনিটি মিমাংসা করে দেয়ার কথা বলেন। এ কারনে তা আর নথিভূক্ত করা হয়নি। কিন্তু ওই ঘটনার বিপরীতে কেন মামলা হল,আর কেন নুরজাহানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হলো তা বুঝতে পারছি না।

মামলার স্বাক্ষী মোঃ সোহাগ ছৈয়াল জানান,মামলার স্বাক্ষী এবং ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

নুরজাহানের স্বামী ইয়াছিন ছৈয়াল মুঠোফোনে বলেন,আমি চট্রগ্রামে ফেরি করে কাপর বিক্রি করি। আয় কম তা স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে রাখতে হয়েছে। বাচ্চারা-বাচ্চারা ঝগড়া করেছে। আমরা বড়রা মিটিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু সালাম প্রভাবশালী ও বিত্তশালী। সে আমার স্ত্রী সন্তানকে মারধর করল,আবার হয়রানিমুল মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠালো। আমি এলাকায় ছিলাম না অথচ আমাকেও আসামী করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কমিটির শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি এড. মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান, আমরা শরীয়তপুর জেলা শাখার কমিটি ঘটনা স্থলে গিয়েছি, স্থানীয় ও মামলার সাক্ষীর সাথে কথা বলে জেনেছি এখানে বাচ্চারা বাচ্চারা মারামারি করেছে, এখানে বড়দের সাথে কোন মারামারি হয়নি, নূরজাহান বেগম ঘটনা সাথে জড়িত না ও তিনি ঘটনা স্থলে ছিলেন না, তাকে অন্যায়ভাবে ফাসিয়ে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এটা মানবধিকার লঙ্গন হয়েছে। আমরা আশা করবো আদালত সঠিক ঘটনাা জেনে তাকে জামিনে মুক্ত করে দিবে।

আসামী পক্ষের আইনজীবি মনোয়ার হোসেন জানান,আসামীকে যে মামলা অভিযুক্ত করা হয়েছে, সে এই অপরাধ করেনি পুলিশ বাদী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমার আসামীকে গ্রেফতার করেছে।

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন,নুরজাহান যে অভিযোগ করেছিল তাতে মারধরের কথা উল্লেখ ছিল। আর শিউলী বেগমের করা মামলায় তার ছেলের মাথায় কোপানোর অভিযোগ ছিল। এ কারনে তাদের মামলাটি নথিভূক্ত করে নুরজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন ওই ঘটনার সাথে নুরজাহান জরিত ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। সেভাবেই পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Total View: 1997